[SSC] বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ৬ষ্ঠ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
সৃজনশীলঃ ০১
ভিনদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে সালমান ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ালেখা করছে। সে তার বন্ধুদের জানিয়েছে যে, তাদের প্রতিবেশী দেশের সরকার তাদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে। তার বাবা প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় ওরা তার বাবাকে গুলিবিদ্ধ করেছে। সে আরও বলেছে যে, সেই দেশের সরকার তার দেশ থেকে তাদের উৎখাত করে ইহুদিদের আবাসস্থল তৈরি করতে চায়।
ক. হ্যারল্ড জে লাস্কি প্রদত্ত নাগরিকত্বের সংজ্ঞাটি লেখ।
খ. শিক্ষাবিস্তারে রাষ্ট্র গুরুত্বারােপ করে কেন? ব্যাখ্যা দাও।
গ. রাষ্ট্রের কোন মৌলিক উপাদানটি সালমানের রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “সালমানের দেশে রাষ্ট্রের মুখ্য কার্যাবলি ব্যাহত হয়েছে- বিশ্লেষণ কর।
ক) হ্যারন্ড জে লাঙ্কি নাগরিকত্বের সংজ্ঞায় বলেন, যে ব্যক্তি রাষ্ট্রের সুযােগ-সুবিধা গ্রহণ করে এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে তাকেই নাগরিক বলা হয়।
খ) রাষ্ট্রের জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তােলা বাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শিক্ষিত জনগােষ্ঠী রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সম্পদ। শিক্ষিত নাগরিক তার অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন থাকেন এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হন। এজন্য রাষ্ট্র শিক্ষা বিস্তারের প্রতি গুরুত্বারােপ করে।
গ) উদ্দীপকের সালমানের রাষ্ট্র রাষ্ট্রগঠনের মুখ্য উপাদান সার্বভৌমত্ব অনুপস্থিত রয়েছে। সার্বভৌম হচ্ছে রাষ্ট্রের চরম ও চূড়ান্ত ক্ষমতা। সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্রের গঠন পূর্ণতা পায়। সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের ঐ বৈশিষ্ট্য যার ফলে নিজের ইচ্ছা ছাড়া অন্য কোনাে প্রকার ইচ্ছা দ্বারা রাষ্ট্র আইনগতভাবে আবদ্ধ নয়। সার্বভৌম ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুটি দিক রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা প্রয়ােগের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায় এবং বাহ্যিক ক্ষমতা প্রয়ােগের মাধ্যমে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকে। উদ্দীপকের সালমানের রাষ্ট্রে এই সার্বভৌমত্ব অনুপস্থিত থাকার কারণে রাষ্ট্র তার বাহ্যিক শক্তি প্রয়ােগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তার রাষ্ট্র প্রতিবেশী সরকার দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
ঘ) সালমানের দেশে রাষ্ট্রের মুখ্য কার্যাবলি ব্যাহত হচ্ছে। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রে বসবাসরত জনগণের অধিকার রক্ষা তার মুখ্য দায়িত্ব। সালমানের দেশে বহুলাংশে তা রক্ষিত হয়নি। যে সকল দায়িত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে তা হলাে- ১. রাষ্ট্রের প্রাথমিক কাজ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। কিন্তু সালমানের বাবা গুলিবি' হওয়া সত্ত্বেও তার প্রতিকার পায়নি। ২. অস্তিত্ব রক্ষা রাষ্ট্রের আরেকটি মৌলিক কাজ। সালমানদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়ে তাদেরকে দেশ থেকে উৎখাত করা হয়। যা রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ৩. সার্বভৌমত্ব ক্ষমতা থাকা এবং প্রয়ােগ করা রাষ্ট্রের মৌলিক কাজের অংশ। দেশের ভিতরের পরিচালন বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাই হলাে সার্বভৌমত্ব। যা সালমানের দেশে অনুপস্থিত। এছাড়াও সালমানের রাষ্ট্রটি তার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক ব্যবস্থা সমুন্নত রাখা ইত্যাদি কাজগুলাে সংরক্ষণ করতে পারেনি। সুতরাং বলা যায়, সালমানের দেশ তার মুখ্য কার্যাবলি পালনে ব্যাহত হয়েছে।
সৃজনশীলঃ ০২
A' নামক রাষ্ট্রে জনাব 'x' জনগণের একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি। তিনি সরকারের শ্রমনীতি আইন' এবং 'বয়স্ক ভাতা ও পেনশন' বিষয়ক আইন প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেন। 'A' রাষ্ট্রের সরকার দুটি নতুন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে, বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে এবং বাল্যবিবাহ রােধকল্পে প্রয়ােজনীয় আইন প্রণয়ন করেছে ।
ক. আইনের উৎস কয়টি?
খ. নাগরিকত্বের প্রাচীন ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. জনাব 'x' এর দ্বারা শ্রমনীতি প্রণয়নটি রাষ্ট্রের কোন ধরনের কাজ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বর্ণিত প্রেক্ষিতে আমরা 'A' রাষ্ট্রকে কি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যা দিতে পারি? যুক্তি দাও।
ক) আইনের উৎস ছয়টি।
খ) নাগরিকত্বের প্রাচীন ধারণায় কেবল যারা শাসনকাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করত, কেবল তাদেরই নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হতাে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল নাগরিকের ধারণায় অধিকাংশ জনগণকে নাগরিক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেননি। তার মতে, অধিকাংশেরই যথাযথভাবে নাগরিক অধিকার প্রয়ােগ করার সামর্থ কিংবা অফুরন্ত সময় নেই। গ্রিক নগররাষ্ট্রে এ যুক্তিতে দাস ও নারীদের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হতাে না এবং তারা রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ করতে পারত না।
গ) জনাব 'x'-এর দ্বারা শ্রমনীতির প্রণয়নটি রাষ্ট্রের একটি অত্যাবশ্যকীয় বা মুখ্য কাজ। আমরা জানি, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রে বসবাসরত জনগণের অধিকার সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্র যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেগুলােকে রাষ্ট্রের অপরিহার্য বা মুখ্য কাজ বলা হয়। যেমন- আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা রাষ্ট্রের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, অর্থ ও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন ইত্যাদি। আইন প্রণয়ন, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের একটি মৌলিক কাজ । রাষ্ট্রীয় আইনসভা বা পার্লামেন্টের মাধ্যমে রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নাগরিকের অধিকারসমূহের নিশ্চয়তা প্রদান করে। উদ্দীপকের জনাব 'x' রাষ্ট্রের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তিনি সরকারের শ্রমনীতি আইন' এবং বয়স্ক ভাতা ও পেনশন' বিষয়ক আইন, প্রণয়নে একজন আইনসভা সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন। এর মাধ্যমে নাগরিকদের বিভিন্ন স্তরে অধিকারের স্বীকৃতি প্রদানমূলক কাজ যা রাষ্ট্রের মুখ্য কাজ।
ঘ) হ্যা, বর্ণিত প্রেক্ষিতে আমরা 'A' রাষ্ট্রকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারি । যেসব রাষ্ট্র তার আবশ্যিক কাজের পাশাপাশি সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য, নাগরিকদের নৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশের ক্ষেত্রে কল্যাণমূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তাকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলে । উদাহরণস্বরূপ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাল্যবিবাহ রােধ, জেন্ডার সমতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামােগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ । উদ্দীপকে বর্ণিত রাষ্ট্রটির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, দেশটির সরকার তার মুখ্য কাজের পাশাপাশি কিছু ঐচ্ছিক কাজও সম্পাদন করেছে। তন্মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এবং বাল্যবিবাহ রােধকল্পে আইন প্রণয়ন। এসব কাজের মাধ্যমে সরকার উক্ত রাষ্ট্রে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাল্যবিবাহের রােধের ন্যায় সামাজিক কল্যাণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যদিও দেশটিতে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সব বৈশিষ্ট্য উপস্থিত নেই, তথাপি উক্ত দেশে কল্যাণমূলক কার্যক্রমের প্রধান ক্ষেত্রসমূহে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রমাণ রয়েছে। এ কারণেই আমরা উক্ত রাষ্ট্রটিকে প্রদত্ত প্রেক্ষিতে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলতে পারি।
সৃজনশীলঃ ০৩
স্বপন শিপইয়ার্ডে চাকরি নিয়ে ২০১৭ সালে সিঙ্গাপুরে গমন করে। সিঙ্গাপুরের পুরাে সীমানা সে ট্যাক্সিক্যাবে চড়ে ভ্রমণ করে । সিঙ্গাপুরের মােট লােকসংখ্যা একটি পরিসংখ্যানও তার কাছে। রয়েছে। সেখানকার রাষ্ট্রপ্রধান এবং রাষ্ট্রের নির্বাহী কর্তৃপক্ষ বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেদের সম্পদ ও জনগণকে রক্ষা করতে সক্ষম। স্বপন সিঙ্গাপুরের নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ রেখেই সেখানে বসবাস করতে আগ্রহী।
ক. Citizen শব্দটির উৎস কী?
খ. আইনের উৎস হিসেবে আইনসভার ব্যাখ্যা দাও।
গ. স্বপন রাষ্ট্র হিসেবে সিঙ্গাপুরের যে উপাদানগুলাের কথা বলেছেন পাঠ্যপুস্তকের আলােকে তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. রাষ্ট্র হিসেবে সিঙ্গাপুরের রয়েছে কিছু অপরিহার্য কার্যাবলি’- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।
ক) Citizen শব্দটি উত্ম ল্যাটিন শব্দ Civics থেকে ।
খ) প্রতিটি সমাজব্যবস্থায় সংঘবদ্ধ জীবনযাপন পরিচালনায় কিছু নিয়মকানুন, রীতিনীতি, বিধিনিষেধ অনুসরণ করা হয়। মানুষের মধ্যকার কুপ্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সামাজিক সমস্যা মােকাবিলার জন্য কিছু নিয়মকানুন, বিধিবিধান প্রণীত হয়। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যা আইন নামে পরিচিত। আধুনিক রাষ্ট্রের আইনসভাই আইনের প্রধান। সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেরই আইনসভা বা আইন পরিষদ আছে। এ আইনসভায় দেশের মানুষের স্বার্থকে লক্ষ রেখে প্রয়ােজনীয় আইন প্রণয়ন ও সংশােধন হতে থাকে।
গ) স্বপন সিঙ্গাপুরের সকল রাষ্ট্রীয় উপাদানের কথা উল্লেখ করেছে। সে সিঙ্গাপুরের সকল সীমানা ঘুরে দেখেছে। এতে একটি রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের চিত্র ফুটে উঠেছে। আবার জনসংখ্যার পরিসংখ্যানের উল্লেখ আছে যা জনসমষ্টির পরিচয় বহন করে। জনসমষ্টি বলতে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত জনগণকে বােঝায়। রাষ্ট্র গঠনের জন্য জনসমষ্টি একান্ত অপরিহার্য। প্রত্যেক রাষ্ট্রই একটি নির্দিষ্ট ভৌগােলিক সীমারেখা দ্বারা পরিবেষ্টিত। সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রের ক্ষমতা সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। প্রত্যেক সমাজব্যবস্থায় চূড়ান্ত ক্ষমতা কার্যকরী করার জন্য একটি মাত্র কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ থাকবে। আর এ ক্ষমতাই হলাে সার্বভৌম ক্ষমতা। জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার এবং সার্বভৌমত্ব এ চারটি উপাদান নিয়েই রাষ্ট্র গঠিত হয়। এর যেকোনাে একটি উপাদান না হলে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। লিমনের বর্ণনায় এ চারটি উপাদানেরই উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ, লিমন রাষ্ট্র হিসেবে সিঙ্গাপুরের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনসমষ্টি, সরকার এবং সার্বভৌমত্ব এ চারটি উপাদানের কথাই বলেছে।
ঘ) রাষ্ট্রের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য ও রাষ্ট্রে বসবাসরত জনগণের অধিকার সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্র যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেগুলােকে অপরিহার্য বা মুখ্য কাজ বলা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা রাষ্ট্রের প্রাথমিক কাজ বা দায়িত্ব। নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার নিশ্চয়তা থেকে রাষ্ট্র নামক সংগঠনের সৃষ্টি হয়। দেশের ভৌগােলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য এবং বৈদেশিক আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন ও পরিচালনা রাষ্ট্রের অপরিহার্য দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রকে পরিচিত করা, রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত সম্পদের ওপর দাবি প্রতিষ্ঠিত করা, অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন, আঞ্চলিক কোর্ট গঠন, বহিঃবিশ্বে অর্থনৈতিক বাজার সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ করা, বিদেশে অবস্থানরত দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সেবা প্রদান করা ইত্যাদি হচ্ছে রাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক অপরিহার্য কাজ। আইন প্রণয়ন, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের মৌলিক কাজ। রাষ্ট্রের দৈনন্দিন কার্যাবলি সম্পাদন, নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রত্যেক রাষ্ট্রে প্রশাসনিক কাঠামাে গড়ে ওঠে। এ কাঠামাের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ােগ, তাদের কর্ম বন্টন ও নির্দেশ, কাজ তদারক এবং পরিচালনা করা রাষ্ট্রের বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। অর্থ ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অর্থ সংগ্রহ ও বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তােলা রাষ্ট্রের মুখ্য কাজ। তাই বলা যায়, রাষ্ট্র হিসেবে সিঙ্গাপুরের উল্লিখিত অপরিহার্য কার্যাবলি রয়েছে।
সৃজনশীলঃ ০৪
প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে ১৬ বছরের রিয়াদ মলিকে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করে। রিয়াদের অন্যায় প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় মলিকে সে হুমকি প্রদান করে। মলি সমস্যাটি বাবাকে জানায়। মলির বাবা থানায় অভিযােগ করে কোনাে সুরাহা না পেয়ে ভয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন।
ক. রাষ্ট্র গঠনের মুখ্য উপাদান কোনটি?
খ. শিক্ষাবিস্তারে রাষ্ট্র অধিক গুরুত্ব প্রদান করে কেন?
গ. উদ্দীপকে আইনের অনুশাসনের কোন ধারণাটি ক্ষুন্ন হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রিয়াদকে উক্ত পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলে তুমি মনে কর? বিশ্লেষণ কর।
ক) রাষ্ট্র গঠনের মুখ্য উপাদান সার্বভৌমত্ব বা সার্বভৌমিকতা।
খ) শিক্ষিত জনগােষ্ঠী রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সম্পদ। শিক্ষিত নাগরিক তার অধিকার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেতন থাকেন এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হন। তাই রাষ্ট্র শিক্ষা বিস্তারের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করে এবং শিক্ষা সুবিধা মানুষের দোরগােড়ায় পৌছে দেয়।
গ) উদ্দীপকে প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে রিয়াদের কর্মকান্ড এবং থানার অভিযােগ করে সুরহা না হওয়ার ঘটনায় আইনের অনুশাসনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, আইনের দৃষ্টিতে সাম্যতার ব্যত্যয় ঘটেছে। সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ‘আইনের অনুশাসন' অপরিহার্য। আইনের অনুশাসন দুটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। যার কোন একটি লঙ্ঘিত হলে আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। তার একটি আইনের প্রাধান্য অন্যটি হলাে আইনের দৃষ্টিতে সকলের সাম্য। উদ্দীপকে রিয়াদের উত্যক্ত করা এবং হুমকির বিরুদ্ধে মলির বাবা থানায় অভিযােগ করার ফলে এর সমাধান হতে পারত। কিন্তু সমাজে প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হওয়ায় আইন প্রয়ােগে পক্ষপাতিত্ব ঘটেছে। আইন অনুসারে প্রতিটি নাগরিক সমানভাবে বিবেচিত হওয়ার নিয়ম থাকলেও উদ্দীপকের ঘটনায় তা হয়নি। যা স্পষ্টভাবে আইনের স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। আইনের যথাযথ প্রয়ােগ ঘটলে মলি বা তার বাবা তাদের অভিযােগের প্রেক্ষিতে উপযুক্ত বিচার পেতেন। সাথে সাথে রিয়াদ তার অনৈতিক কাজের শাস্তি পেতেন। সুতরাং এটা স্পষ্ট আইনের দৃষ্টিতে সমতার লঙ্ঘন হয়েছে উদ্দীপকে বর্ণিত মলি ও রিয়াদের ঘটনায়।
ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত রিয়াদের অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি। এজন্য প্রথম কাজ হলো- রিয়াদকে সঠিকভাবে শিক্ষিত করে গড়ে তােলা। কেননা শিক্ষা মানুষকে অন্যায় বা অনৈতিক কাজ থেকে বিরত রাখে। শিক্ষিত মানুষ সুনাগরিক ও দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে থাকে। রিয়াদের অনৈতিক কর্মকান্ডের পিছনে দায়ী তার অজ্ঞতা। অজ্ঞতাকে দূর করে তাকে দেশপ্রেমিক শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে শিক্ষা। আবার সমাজে আইনের শাসন তথা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে রিয়াদকে অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা সম্ভব। যেহেতু রিয়াদের বয়স ১৬। সুতরাং সে কিশাের অপরাধের আওতায় এসে পুনর্বাসনের সুযােগ পাবে। ফলে রিয়াদ সংশােধনের সুযােগ পাবে এবং সুনাগরিকে পরিণত হবে। রিয়াদসহ সমাজের সকলে শিক্ষা নিতে পারবে যে, অপরাধ বা অনৈতিক কাজ করে রেহাই পাওয়া যায় না । সুতরাং এটা বলা যায় যে, যদি রিয়াদকে এ শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায় যে, নারীর প্রতি শ্রদ্ধা করা নাগরিক ও নৈতিক দায়িত্ব, সমাজে অন্যের অধিকারের ব্যত্যয় ঘটে এমন কাজ করা অপরাধ; তাহলে সে। অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকবে। সাথে সাথে প্রভাবশালী হওয়ায় আইনের ব্যত্যয় ঘটবে না ব্যত্যয় ঘটবে না এমন শিক্ষা এমন শিক্ষা থাকলে পারিবারিকভাবে সে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হত।
সৃজনশীলঃ ০৫
আইন একদিনে তৈরি হয়নি। আইন তৈরিতে যুগে যুগে। সমাজ, ধর্ম, নীতিবােধ, বিজ্ঞানসম্মত আলােচনা ইত্যাদির সাহায্য নেয়া। হয়। এই আইনের উপর ভিত্তি করেই জনাব 'x' সিটি কর্পোরেশনের। মশক নিধন কাজে বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ জানতে চেয়ে আবেদন করেন।
ক. অধ্যাপক গার্নার প্রদত্ত রাষ্ট্রের সংজ্ঞাটি লেখ।
খ. সার্বভৌমত্ব বলতে কী বােঝ? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব 'X' এর আবেদনের উত্তর দিতে সিটি কর্পোরেশন কী বাধ্য? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে নির্দেশিত আইনের উৎসগুলাে আলােচনা কর।
ক) অধ্যাপক গার্নারের মতে, “রাষ্ট্র হলাে বহুসংখ্যক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত এমন এক জনসমাজ যারা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়িভাবে বসবাস করে, যা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ হতে মুক্ত এবং যাদের একটি সুসংগঠিত সরকার আছে, যে সরকারের প্রতি ঐ জনসমাজ অনুগত।
খ) সার্বভৌমত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের চরম ও চূড়ান্ত ক্ষমতা। এটি রাষ্ট্রের এমন একটি ক্ষমতা যা রাষ্ট্রকে অন্যান্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে পৃথক করে। প্রত্যেক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় চূড়ান্ত ক্ষমতা কার্যকর করার জন্য একটিমাত্র কর্তৃপক্ষ থাকবে। আর এই কর্তৃপক্ষের ক্ষমতাই হলাে সার্বভৌম ক্ষমতা।
গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব 'x' এর আবেদনের উত্তর দিতে সিটি কর্পোরেশন বাধ্য। মশক নিধন কাজে বরাদ্দকৃত টাকার পরিমাণ জানতে চাওয়া একজন নাগরিকের তথ্য অধিকারের মধ্যে পড়ে । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ৩৯ অনুচ্ছেদের চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা নাগরিকের অন্যতম অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। তারই অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হয়। এ লক্ষ্যে ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল তথ্য অধিকার আইন জারি করা হয় । তথ্য অধিকার আইনে তথ্য বলতে কোনাে কর্তৃপক্ষের গঠন কাঠামাে ও দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত জনগণকে দেওয়া হয়। এই আইন অনুযায়ী সরকারের কোনাে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বা কার্যালয়ের সাথে যুক্ত বা' অধীন কোন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর বা দপ্তরের প্রধান কার্যালয়, বিভাগ, জেলা বা উপজেলার তথ্য প্রদানের ইউনিট হিসেবে কাজ করবে। আর তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্যের সংরক্ষক ভাণ্ডার হিসেবে জনগণকে তথ্য প্রাপ্তির সুযােগ সৃষ্টি করে দিবে। তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত হলে শাসন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা পায়। এর ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায় এবং শাসনতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস পায়। এ কারণে মশক নিধনসহ যেকোনাে কাজে বরাদ্দকৃত অর্থ সম্পর্কে জনগণের জিজ্ঞাসা থাকলে সিটি কর্পোরেশন উত্তর দিতে বাধ্য।
ঘ) উদ্দীপকে আইনের কয়েকটি উৎসের কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হল্যান্ড আইনের ৬টি উৎসের কথা বলেছেন। এর মধ্যে প্রথা, ধর্ম, নীতিবােধ ও বিজ্ঞানসম্মত আলােচনা উদ্দীপকে আলােচিত হয়েছে। প্রথা আইনের সবচেয়ে প্রাচীন রূপ। সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি, আচার-আচরণ ও অভ্যাস হচ্ছে প্রথা। এ সকল সামাজিক প্রথার আবেদন এতই বেশি যে, এগুলাে অমান্য করলে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়। কালক্রমে এসব প্রচলিত প্রথা রাষ্ট্রকর্তৃক স্বীকৃতি পেয়ে আইনে পরিণত হয়। মানুষের উপর ধর্মের প্রভাব অপরিসীম। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন আইন অনুসরণ করে আসছে। এজন্য ধর্ম, ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মগ্রন্থ আইনের অন্যতম উৎস । আবার আইনবিদদের বিজ্ঞানসম্মত আলােচনা বা তাদের আইন বিষয়ক গ্রন্থাবলিও আইনের উৎস হিসেবে কাজ করে। আবার বিচারক যখন প্রচলিত আইনের মাধ্যমে কিংবা উপযুক্ত আইনের অভাবে ন্যায়বিধান করতে ব্যর্থ হন তখন নিজস্ব সামাজিক ন্যায়নীতির আলােকে ন্যায্য রায় প্রদান করেন। এরূপ নীতিবােধ দ্বারা প্রণীত আইন দেশের আইনের মর্যাদা লাভ করে। এছাড়াও আইনসভা এবং বিচারসংক্রান্ত রায় আইনের অন্যতম দুটি উৎস।
সৃজনশীলঃ ০৬
জনাব সেলিম ও জনাব রফিক ‘ক’ দেশের নাগরিক। জনাব সেলিম সব সময় সময়মত কর প্রদানসহ দেশের অন্যান্য দায়িত্ব কর্তব্য পালন করেন। এ কারণে তিনি পুরস্কৃত হন। অপরদিকে জন্যৰ রফিক কর ফাঁকিসহ নানা রকমের অন্যায় করায় রাষ্ট্র তাকে কঠিন শাস্তি দেয়।
ক. রাষ্ট্র কর্তৃক আরােপিত অধিকার ও বাধ্যবাধকতাসমূহ আইন- উক্তিটি কার?
খ. সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার একটি অপরিহার্য উপাদান। ব্যাখ্যা কর।
গ. জনাব সেলিমের মতাে সব নাগরিকেরা দায়িত্ব-কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করলেই রাষ্ট্র উন্নত হবে। বিশ্লেষণ কর।
ঘ. জনাব রফিকের মতাে সবক্ষেত্রে আইনের প্রয়ােগ হলেই সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। তােমার মতামত দাও।
ক) রাষ্ট্র কর্তৃক আরােপিত অধিকার ও বাধ্যবাধকতাসমূহ আইন উক্তিটি টি এইচ গ্রিনের।
খ) সরকার রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য উপাদান। সরকার বলতে ব্যাপক অর্থে শাসকগােষ্ঠীর সকলকে বােঝায়, যারা প্রত্যক্ষ এবং পরােক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের ক্ষমতা সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। অধ্যাপক গার্নারের মতে, “রাষ্ট যদি হয় জীবদেহ তবে সরকার হলাে এর মস্তিষ্কস্বরূপ।” সরকার গঠনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন আংশিকভাবে সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তিনটি বিভাগ থাকে। আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমন্বয়ে সরকার গঠিত হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের সরকার গঠন করে। সরকার পদ্ধতি বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন হতে পারে। তাই বলা যায়, সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার একটি অপরিহার্য উপাদান।
গ) উদ্দীপকের উল্লিখিত নাগরিকতার সাথে সম্পর্কিত এর কর প্রদান বিষয়টির ইঙ্গিত রয়েছে। একজন সুনাগরিক রাষ্ট্রের বিভিন্ন অধিকার ভােগের সাথে সাথে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্যও পালন করে থাকে। উদ্দীপকের জনাৰ সেলিম একজন সুনাগরিক। তিনি সব সময় সময়মতাে কর প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকের দায়িত্ব পালন করেছেন। রাষ্ট্র জনগণের জন্য নানাবিধ সুবিধা প্রদান করে থাকে। রাষ্ট্রীয় আয়ের প্রধান উৎস নাগরিকদের প্রদেয় কর ও খাজনা। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক প্রতিরক্ষা এবং উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়ােজন হয়। নাগরিকদের যথাসময়ে প্রদেয় কর হতে এসব প্রয়ােজন মেটানাে হয়। অতএব বলা যায়, উদ্দীপকের জনাব সেলিম সব সময় সময়মতাে কর প্রদানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকে সহায়তা করছে এবং দেশের অন্যান্য দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে সুনাগরিক হিসেবে পুরস্কৃত হচ্ছেন।
ঘ) হ্যা, আইন প্রয়ােগ সবক্ষেত্রে সমান হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে বলে আমি মনে করি। সুশাসনের জন্য আইন' এর প্রয়ােজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী। রাষ্ট্রে আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সকল নাগরিক সমানভাবে স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র প্রদত্ত সুযােগ-সুবিধা পেতে পারে। উদ্দীপকে জনাব রফিক কর ফঁাকিসহ নানা রকমের অন্যায় করার রাষ্ট্র তাকে কঠিন শাস্তি দেয়। আইনের প্রয়ােগ যদি জনাব রফিকের মতাে সবক্ষেত্রে প্রয়ােগ করা হয় তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ আইন সবার জন্য সমান। সাধারণভাবে আইনের অনুশাসন দুটি ধারণা প্রকাশ করে- ক. আইনের প্রাধান্য ও খ. আইনের দৃষ্টিতে সকলের সাম্য। আইনের প্রাধান্য বজায় থাকলে সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করতে সাহস করে না। বিনা বিচারে কাউকে আটক রাখা ও শাস্তি দেওয়া— এগুলাে আইনের প্রাধান্যের পরিপন্থি। আইনের প্রাধান্য হচ্ছে নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। সমাজে আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলে কেউ আইন অমান্য করে অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আর আইনের দৃষ্টিতে সাম্য মানে সমাজে ধনী-দরিদ্র, সবল-দুর্বল, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলেই আইনের দৃষ্টিতে সমান। সকলের জন্য একই আইন প্রযােজ্য। ব্যক্তিস্বাধীনতা তখনই খর্ব হয় যখন রাষ্ট্রে আইনের অনুশাসন থাকে না। আইনের শাসনের অভাবে আইন প্রয়ােগকারী সংস্থা সচরাচর নাগরিকদের হয়রানি করে, বিনা অপরাধে আটকও করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি না হলে আইনের শাসন কায়েম হয় না। তাই সুশাসনের জন্য আইনের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের জনাব রফিককে যে কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়েছে তার মতো এসব ক্ষেত্রে আইনের প্রয়ােগ হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমি মনে করি।