[SSC] বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ৫ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

সৃজনশীলঃ ০১

উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান দেশসমূহের মানুষদের বাসস্থান বসবাস উপযােগী রাখতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয়। কিন্তু আমাদের অঞ্চলের দেশসমূহের তা করার প্রয়ােজন পড়ে না। আমরা প্রাকৃতিকভাবেই সূর্যের আলো পেয়ে থাকি, যা সৌরশক্তির খুবই মূল্যবান উৎস। 

ক. পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কী?
খ. পানিকে কেন সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়?
গ. ভৌগােলিক দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্দীপকে উল্লিখিত অবস্থার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রয়ােজনে উদ্দীপকের শেষােক্ত আলােচিত সম্পদটির কী কী সম্ভাব্যতা রয়েছে তা বিশ্লেষণ কর। 

ক) পানির পরিকল্পিত প্রাপ্যতা ও ব্যবহারকে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা বলা হয়। 

খ) মানুষসহ জীবজগতের অস্তিত্বের জন্য এবং কৃষি ও শিল্পের বিকাশের জন্য পানির ব্যবহার অপরিহার্য। বৃষ্টি থেকে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া গেলেও শীত ও গ্রীষ্মকালে পানির অভাব হলে কৃষি, শিল্প ও জীবনযাপন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। এসব গুরুত্বের বিবেচনায় পানিকে অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। 

গ) উদ্দীপকে উত্তর আমেরিকা, ইউরােপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশসমূহের জলবায়ুর তুলনামূলক চিত্র ফুটে উঠেছে। উত্তর- আমেরিকা ও ইউরােপীয় দেশসমূহে মানুষদের বাসস্থান বসবাস উপযােগী রাখতে প্রচুর জ্বালানি খরচ হয় । কিন্তু আমাদের অলের দেশসমূহে আমরা প্রাকৃতিকভাবেই সূর্যের আলো পেয়ে থাকি বলে তা প্রয়ােজন পড়ে না। নিরক্ষীয় নিম্ন অক্ষাংশ অঞলে সূর্য প্রায় সারাবছরই লম্বভাবে কিরণ দেয়। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অপরাপর দেশসমূহ নিরক্ষীয় বা ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এসব দেশ সহজেই প্রচুর সৌরশক্তি পেয়ে থাকে। এ কারণেই কখনাে এ অঞলের দেশসমূহে তাপমাত্রা নিম্নপর্যায়ে নামে না। ফলে দিনে সূর্যের আলাে ছাড়া অন্ধকারে বাস করতে হয় না। অন্যদিকে, ইউরােপ ও উত্তর আমেরিকা অঞলে সূর্য বছরের কয়েক মাস বাঁকাভাবে কিরণ দেয় এবং কখনাে কখনাে সূর্য দেখাই যায় না। সে কারণে এসব দেশের মানুষকে বাড়িঘর বসত উপযােগী রাখতে প্রচুর জ্বালানি সম্পদ ব্যয় করতে হয়। এ ভৌগােলিক অবস্থানগত কারণেই উল্লিখিত অলদ্বয়ে বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। 

ঘ) উদ্দীপকের শেষাংশে আলােচিত সম্পদটি হলাে সূর্যের আলাে বা সৌরশক্তি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন প্রয়ােজনে এ শক্তি সম্পদটির বিভিন্নমুখী সম্ভাব্যতা রয়েছে। সৌরশক্তি আমরা প্রকৃতি থেকে অনায়াসে লাভ করি বলে তেমন কোনাে বিনিয়ােগ ব্যতিরেকেই এটি ব্যবহার করে লাভবান হওয়া যায়। সৌরশক্তি থেকে আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা সহজেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। ফলে এর মাধ্যমে আমরা আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারি। সৌরশক্তির রূপান্তর ঘটিয়ে তা সঞ্চয় করে বা সরাসরিভাবেও যানবাহন, সেচ মেশিন প্রভৃতি পরিচালনা করা যায় । সৌরশক্তি থেকে সৌরচুল্লি তৈরি করে জ্বালানি সাশ্রয় করা যেতে পারে। এভাবে সৌরশক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সৌরবিদ্যুৎ, সৌরচুল্লি, সৌরতাপীয় যন্ত্র, যানবাহন, কৃষিতে সৌর প্রযুক্তি প্রভৃতি উপায়ে বিপুল সম্ভাব্যতার দ্বারা খুলে দিয়েছে।

সৃজনশীলঃ ০২

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ। এদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অসংখ্য নদী, শিল্পকারখানা, ফ্যাক্টরি, গ্রাম, শহর, বন্দর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছে। যােগাযোগ, বাণিজ্য এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সম্প্রতি পানি সংকট আমাদের দেশের একটি অন্যতম উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইসাথে, এটি আমাদের জীবনের সকল স্তরে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে। 

ক. খাদ্য নিরাপত্তা কী?
খ. গরানজাতীয় বনভূমি কেন বাংলাদেশের বিশেষ ধরনের বনাঞল?
গ. উল্লিখিত সমস্যা সমাধানের উপযােগী পদক্ষেপ বর্ণনা কর।
ঘ. ‘যােগাযােগ, বাণিজ্য এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য'- বিশ্লেষণ কর। 

ক) অবাধ খাদ্য সরবরাহ এবং সারা বছর খাদ্যের পর্যাপ্ত প্রাপ্যতাই হলাে খাদ্য নিরাপত্তা। 

খ) গরানজাতীয় বনভূমি বাংলাদেশের বিশেষ বনাএল। কেননা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত এ বনভূমি শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্রোতজ বনভূমি। এ ধরনের বনভূমি জোয়ার ও ভাটার লােনা পানিতে জন্মায়। সুন্দরবনে জন্ম নেওয়া এ বনাঞ্চলের উদ্ভিদসমূহ হচ্ছে সুন্দরি, গেওয়া, পশুর, ধুন্দল, কেওড়া, বাইন, গরান, গােলপাতা। এ বনাঞ্চলকে অন্য সমস্ত বনাঞ্চল থেকে আলাদা করে বিশেষ বনভূমির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। 

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত সমস্যাটি হলাে পানির অভাব । পানির অভাব বা সংকট নিরসনে পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। পানির অভাব রােধের জন্য যে উদ্যোগগুলাে গ্রহণ করতে হবে তা হলাে- নদনদী, পুকুর, খাল, বিল, হাওড়, বন ও ভূমির পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। শুষ্ক ও শীত মৌসুমে দেশের সর্বত্র পানির অপব্যবহার দূর করার নীতি ও কৌশল বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব নদী পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে যেসব নদী খনন করলে পানির প্রবাহ ও সংরক্ষণ সম্ভব হবে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে কয়েকটি রির্জাভার খনন করা গেলে শুষ্ক মৌসুমে পানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। দেশের দক্ষিণাঞলে মিঠা পানি সরবরাহ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের বাধ দিতে হবে। নদীভাঙন রােধ ও নদীর ড্রেজিং সম্পন্ন করে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে । উপরিউক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করলে পানির অভাব দূর করা সম্ভব হবে। 

ঘ) যােগাযােগ, বাণিজ্য এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে নদী অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে । নদীমাতৃক দেশে যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার একটি উল্লেখযােগ্য অংশ নদীগুলাে বহন করছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, সুরমা, কুশিয়ারা, মাতামুহরী, আত্রাই, মধুমতী, গড়াই ইত্যাদি নদী যাত্রী পরিবহণ সেবায় বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে। এদেশে নদীপথেয় দৈর্ঘ্য প্রায় ৯,৮৩৩ কি.মি.। এর মধ্যে ৩,৮৬৫ কি.মি. পথে সারাবছর নৌচলাচল করে। নদীপথে কিছু সংরক্ষণ খরচ ছাড়া তেমন কোনাে নির্মাণ খরচ না থাকায় নদীপথে যাতায়াতের খরচও অপেক্ষাকৃত কম। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে দেশের মােট বাণিজ্যিক মালামালের ৭৫ শতাংশ আনা-নেওয়া করা হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে শিপিং কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নদীপথের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। দেশের প্রায় সব নদীপথেই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে লক্ষ লক্ষ টন মালামাল পরিবহণ হয়ে থাকে। এছাড়াও নদীর পানির বেগ ব্যবহার করে টারবাইন ঘুরিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে জল বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এটি নবায়নযােগ্য শক্তি সম্পদ। সবচেয়ে কম খরচে এ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। বাংলাদেশের কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে পাকিস্তান আমলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। পানি সম্পদ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অধিক লাভজনক হয়ে থাকে। সুতরাং বলা যায় যে, যােগাযােগ, বাণিজ্য এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে নদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

সৃজনশীলঃ ০৩

বাংলাদেশ একটি নদী উপকূলীয় দেশ। দেশটি পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। শুধু অর্থনীতি নয় বরং সংস্কৃতিগত দিক থেকেও দেশটি নদীর সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এদেশের মানুষের জীবনযাত্রা ও নদী পরস্পরের সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত। এদেশের অধিকাংশ নদীর উৎপত্তিস্থল হিমালয় পর্বত এলাকায় এবং পতনস্থল বঙ্গোপসাগরে। 

ক. নদীর মিলনস্থল কী?
খ. উপনদী ও শাখা নদীর পার্থক্য ব্যাখ্যা কর।
গ. বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ’- ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. “এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে রয়েছে নদীর গভীর সম্পর্ক" – আলােচনা কর। 

ক) দুই বা ততােধিক নদী যে স্থানে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয় তাকে নদীর মিলনস্থল বলা হয়। 

খ) যেসব নদী ঝরনাধারা, হ্রদ, বরফগলা স্রোত প্রভৃতি থেকে উৎপন্ন হয়ে অন্য কোনাে নদী থেকে উৎপন্ন হয়, তাকে শাখানদী বলে। যেমন- ধলেশ্বরী, যা যমুনার প্রধান একটি শাখানদী। অন্যদিকে, উপনদী হলে জল বিভাজকের একটি প্রকরণ, যা বৃহদায়তন নদীর একটি ক্ষুদ্রতর ধারা। মােটকথা, নদী থেকেই সৃষ্ট হয়ে তা যদি আবার বড় নদীর সাথে মিলিত হয়, তা হলাে উপনদী । কিন্তু শাখানদী পৃথক ও একক নদী হিসেবেই প্রবাহিত হতে থাকে। 

গ) বাংলাদেশের প্রায় ৮০% ভূমি নদীবিধৌত এক বিস্তীর্ণ সমভূমি। বছরের পর বছর নদীপ্রধান এ অঞ্চলে বন্যার সাথে পরিবাহিত পলিমাটি সঞিত হয়ে এ প্লাবন সমভূমি গঠিত হয়েছে। স্রোতের গতিবেগ হ্রাসবৃদ্ধির ফলে নদীর মােহনায় নদীবাহিত কাদা, পলি, বালি, কাঁকর, নুড়ি প্রভৃতি স্তরে স্তরে ত্রিকোণাকৃতি ভূমিরূপ গঠিত হয়। গ্রিক অক্ষর ডেল্টার সদৃশ এ জাতীয় ভূমিরূপকে ডেল্টা বলা হয় । বাংলায় বদ্বীপ বলা হয়। প্রধান দুটি হিমালয়ী নদী পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্রের সম্মিলিত স্রোতধারা এদেশের ভিতর দিয়ে বয়ে গেছে। ধারণা করা হয় যে, কালক্রমে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের নদী মােহনায় পলি জমেই বাংলাদেশের এ বিশাল প্লাবন সমভূমি সৃষ্টি হয়েছে। ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশাের, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ঢাকা অঞ্চলের অংশবিশেষে এজাতীয় প্লাবন সমভূমিরূপ রয়েছে যা পৃথিবীতে আয়তনে বৃহত্তম । আর এ কারণেই বাংলাদেশকে পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ বলা হয়। 

ঘ) হ্যা, এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে রয়েছে নদনদীর গভীর সম্পর্ক। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম নদীপ্রধান দেশ এবং বৃহত্তম বদ্বীপ। এদেশের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, দৈনন্দিন জীবন এমনকি সামগ্রিক বিচারে পুরাে দেশটিই নদীর সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। সেই আদিকাল থেকেই এদেশের নদনদীর তীরবর্তী স্থানে সভ্যতা গড়ে উঠতে শুরু করে। কৃষি, প্রাত্যহিক জীবনে নিত্যপ্রয়ােজনীয় ক্ষেত্রসমূহ, মাছ শিকার প্রভৃতি খাদ্য ও রােজগারের প্রধান উৎস হিসেবে নদী যুগ যুগ থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পানির কারণে নদীকেন্দ্রিক জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে মানুষের সাথে নদনদীর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। খাদ্যোৎপাদন, পণ্য পরিবহণ, যােগাযােগ, ব্যবসায় বাণিজ্য প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহে বন্দর, শহর, গঞ্জ প্রভৃতি গড়ে উঠেছে। এভাবেই এদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলাের সৃষ্টি। যেমন— ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা, চাঁদপুর ইত্যাদির প্রতিটি নদীতীরবর্তী শহর যা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। নদী থেকে সেচ নিয়ে দেশের লক্ষ লক্ষ জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। নদীর জল থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হচ্ছে। এদেশের সংস্কৃতিতে নদীর প্রভাব রয়েছে। নদীকেন্দ্রিক আঞ্চলিক গান, নদীর প্রভাবে জীবনযাত্রার প্রণালিও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এভাবেই এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার সাথে নদীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে।