প্রশ্নঃ ০১
১ম পর্যায়: ১৯৫১২ ↔ ২য় পর্যায়: ১৯৬৬ ↔ ৩য় পর্যায়: ১৯৬৯ ↔ ৪র্থ পর্যায়: ১৯৭০ ↔ ৫ম পর্যায়: ১৯৭১
ক. স্মৃতির মিনার' কবিতাটি কে লিখেছেন?
খ. যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা যেকোনাে ২টি দাবি উল্লেখ কর।
গ. উল্লিখিত ২য় পর্যায়টির প্রভাব বিশ্লেষণ কর।
ঘ. “৫ম পর্যায়ের একটি অখণ্ডনীয় কারণ হলাে ৪র্থ পর্যায়টি”- তুমি কি এ মন্তব্যের সাথে একমত? মতামত দাও।
ক) 'স্মৃতির মিনার' কবিতাটি লিখেছেন আলাউদ্দিন আল আজাদ।
খ) যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার ২টি দাবি হলো- ১. বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। ২. শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করতে হবে।
গ) উদ্দীপকে ছকের ২য় পর্যায়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক যে ঘটনাটির প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে তা হলাে ১৯৬৬-এর ছয় দফা দাবি। ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহােরে অনুষ্ঠিত বিরােধী দলসমূহের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। এ দাবির প্রভাব সূক্ষ্মভাবে দেশকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়ে চলে । এ দফার প্রথম দৃশ্যমান প্রভাব পরিলক্ষিত হয় দাবি আদায়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ছয় দফা দাবিতে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ঢাকায় হরতাল পালনে পুলিশ নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালায়। এতে অনেকে শহিদ হন এবং অসংখ্য আহত হন। ফলশ্রুতিতে আন্দোলন আরও তীব্র হয় আর পাকিস্তান সরকার তা দমন করতে নির্মম পথ বেছে নেয়। এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের শত্রুতে পরিণত হন। অন্যদিকে, এ দাবি মানুষের মধ্যে মানসিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে থাকে যার বদৌলতে পরবর্তীতে মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় ঘটে। সুতরাং, ছয় দফা তথা উদ্দীপকে ইঙ্গিতপূর্ণ ২য় পর্যায়টির প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
ঘ) হ্যা, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির সাথে আমি একমত। উদ্দীপকের ৫ম ও ৪র্থ পর্যায় দুটি হলাে বাংলার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের পর্যায় ও ১৯৭০ সালের পর্যায়। ১৯৭১ সাল তথা ৫ম পর্যায়টি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বছর এবং এ স্বাধীনতা ছিল একই বছরে সংঘটিত দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলাফল। অন্যদিকে, ১৯৭০ সাল পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন সংঘটনের বছর। উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রতিটি পর্যায়ই। পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে জাতীয়তাবাদের সূচনা ঘটে, ৬৬-এর ছয় দফায় তার স্পষ্ট প্রতিফলন ছিল। একইভাবে, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পিছনে যেমন ছয় দফার ভূমিকা রয়েছে, তেমনি এটি আবার ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও তা প্রভাব রেখেছিল। এসবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথে অগ্রযাত্রা হলেও তা চূড়ান্ত রূপলাভ করে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। উল্লিখিত ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়গুলাে ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত হলেও '৭০-এর প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তাদের সমন্বিত প্রতিফলন ঘটে। ফলে আওয়ামী লীগ উক্ত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে । আর এ ফলাফলের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতীয়তাবাদের আনুষ্ঠানিক বিজয় ও অন্যদিকে পাকিস্তান সরকারের জন্য পরাজয় ঘটে। এরপর প্যকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা ও যড়যন্ত্র করতে শুরু করে। আর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অনিবার্যভাবে এ কর্তৃত্বের বিরুন্দে দৃঢ়ভাবে অবস্থান গ্রহণ করে। এভাবেই এ নির্বাচনটি বাঙালির রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে মুক্তিযুদ্ধে রূপদান করে বিশাল ভূমিকা রাখে। আর তাই এ পর্যায়টিকে ৫ম পর্যায় তথা মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতার অখণ্ডনীয় কারণ হিসেবে দাবি করা মন্তব্যটির সাথে আমি একমত।
প্রশ্নঃ ০২
২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে একটি ধারাবাহিক বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছিল। এ বিক্ষোভের সূত্রপাত ঢাকায় লাইসেন্সবিহীন এক চালকের। বেপরােয়াভাবে যাত্রী সংগ্রহের সময় ঘটে যাওয়া একটি সড়ক দুর্ঘটনা থেকে যেখানে দুজন মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিরাপদ সড়ক ও কঠোর ট্র্যাফিক আইনের দাবিকে প্রকট করে তােলে এবং শীঘ্রই তা দেশব্যাপী বিক্ষোভে রূপ নেয়।
ক. পরিবার কী?
খ. মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজের ভূমিকা লেখ।
গ. উদ্দীপক এবং তােমার পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তুতে সাদৃশ্য রয়েছে বিশ্লেষণ কর।
ঘ. “উক্ত ঘটনাটি বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ হতে ও জাতীয়তাবাদ জাগ্রত করতে সাহায্য করে।"- মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই
ক) পরিবার হলাে একই সঙ্গে বসবাসকারী কয়েকজন ব্যক্তির সমষ্টি এবং এর ভিত্তি হলাে বিবাহ।
খ) পাকিস্তানের চব্বিশ বছরে বাঙালি জাতির স্বার্থসংশ্লিষ্ট সকল আন্দোলনে গৌরবােজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে এদেশের ছাত্রসমাজ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিরাট অংশ মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেয়। মুক্তিবাহিনীতে একক গােষ্ঠী হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। মূলত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের এক পর্যায়ে মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছিল। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় সংগঠিত হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রসমাজের মহান আত্মত্যাগ ব্যতীত স্বাধীনতা অর্জন কঠিন হতাে।
গ) উদ্দীপকের সাথে আমার পাঠ্যপুস্তকের মহান ভাষা আন্দোলনের সাদৃশ্য রয়েছে। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে কার্জন হলে পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘােষণা করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। উপস্থিত ছাত্র-শিক্ষকরা তখন না না না’ ধ্বনির মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানায়। দেশের ছাত্রসমাজ, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী এবং অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা বাংলা ভাষার পক্ষে অবস্থান নেয়। শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। এ আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় গণপরিষদের অধিবেশন বসলে ছাত্ররা গণপরিষদ ঘেরাও এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তৎকালীন সরকার বিষয়টি বুঝতে পেরে ছাত্রদের বাধা দেওয়ার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররাও ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐ মিছিলের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ নাম না জানা আরও অনেক শহিদ হন। ফলে সারা দেশে রাষ্ট্রভাষার দাবি প্রকট হয়ে ওঠে। আন্দোলন বিক্ষোভে রূপ নেয়। উদ্দীপকের ক্ষেত্রেও দেখা ' যায়, ঢাকায় লাইসেন্সবিহীন এক চালকের বেপরােয়া যাত্রী সংগ্রহের সময় ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনায় দুজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ঘটনা শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরাপদ সড়ক ও কঠোর ট্রাফিক আইনের দাবি প্রকট করে তােলে যা পরবর্তীতে বিক্ষোভে রূপ নেয়। যা সুস্পষ্টতই আমার পাঠ্যপুস্তকের ভাষা আন্দোলনের সাথে সাদৃশপূর্ণ।
ঘ) উক্ত ঘটনা তথা মহান ভাষা আন্দোলন বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ হতে ও জাতীয়তাবাদ জাগ্রত করতে সাহায্য করে।—মন্তব্যটি যথার্থ । বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পাকিস্তান সরকার একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে বাংলার ছাত্র-জনতা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এবং ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তারা ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায় করেন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এটি ছিল বাঙালির প্রথম প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রেরণা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতি পশ্চিম পাকিস্তানের অবহেলা ও শােষণের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছিল। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবমাননা বাঙালির মনকে প্রবল নাড়া দিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানের হাতে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি কিছুই নিরাপদ নয়। নিজস্ব জাতিসত্তা সৃষ্টিতে ভাষা ও সংস্কৃতির সম্পর্ক ও গুরুত্ব পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে অধিকতর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরই ভিত্তিতে বাঙালি জাতি এক হয় এবং ভাষা আন্দোলন গড়ে তােলে। প্রথমে এ আন্দোলন শিক্ষিত ও ছাত্রসমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পূর্ব বাংলায় সব ধরনের লােক এতে অংশগ্রহণ করে। আর ভাষাকেন্দ্রিক এ ঐক্যই জাতীয়তাবাদের মূলভিত্তি রচনা করে। সুতরাং “ভাষা আন্দোলন বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ হতে ও জাতীয়তাবাদ জাগ্রত করতে সাহায্য করে”- মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্নঃ ০৩
ঢ দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মি. অ দেশটির পূর্বাঞলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করেন। ধীরে ধীরে পূর্বাঞ্চলের মানুষেরা সংঘবদ্ধ হতে শুরু করে এবং তাদের অধিকার আদায়ের দাবি উত্থাপন করতে শুরু করে। এর বিপরীতে শাসক নিপীড়ন শুরু করলে সাধারণ মানুষেরা গণঅভ্যুত্থান শুরু করে । অবশেষে সাধারণ মানুষেরা বর্বর শাসকের হাত থেকে মুক্ত হয় এবং স্বাধীনতা অর্জন করে।
ক. তমদুন মজলিস কী ধরনের সংগঠন ছিল?
খ. মৌলিক গণতন্ত্র বলতে কী বােঝ?
গ. “উল্লিখিত বৈষম্যই জনগণকে গণঅভ্যুত্থানের দিকে ঠেলে দেয়”- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উক্ত গণঅভ্যুত্থানই স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে”– তােমার মতামত দাও।
ক) তমদুন মজলিস একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ছিল।
খ) জেনারেল আইয়ুব খান তার সামরিক শাসন দীর্ঘস্থায়ী করতে মৌলিক গণতন্ত্র নামে একটি ব্যবস্থা চালু করেন। এতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ৮০ হাজার নির্বাচিত ইউনিয়ন কাউন্সিলর নিয়ে নির্বাচকমণ্ডলী গঠনের কথা বলা হয়। তাদের ভােটেই রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিধান। রাখা হয়। সামরিক শাসনের ফলে সকল ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়। এ ক্ষমতা ধরে রাখতেই মৌলিক গণতন্ত্র চালু করা হয়।
গ) উদ্দীপকে ‘ঢ’ দেশের প্রেসিডেন্ট মি. ‘অ’-এর দেশটির পূর্বাঞলের মানুষের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। উক্ত বৈষম্যের ফলে পূর্বাঞ্চলের মানুষদের সংঘবদ্ধ হওয়া, তারপর দাবি উথাপন ও গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এক পর্যায়ে স্বাধীন হওয়ার কথা বলা হয়েছে যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস ফুটে উঠেছে। তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রে ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে নিজেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত করেন। এরপর তিনি মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নেন। এই দীর্ঘ শাসনামলেও সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে সকল ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয় এবং পূর্ব পাকিস্তানিরা ক্রমশ বৈষম্যের শিকার হতে থাকে। এক পর্যায়ে পশ্চিম পাকিস্তানের শশাষণের ফলে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রসহ সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের আয় ও উৎপাদন পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় হলেও বাজেটে পূর্ব পাকিস্তান পিছিয়ে থাকত। প্রশাসনের সবক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানিদের বাদ রেখে পশ্চিম পাকিস্তানিদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। এভাবে প্রতিটি স্তরে বৈষম্যের ফলে গণআন্দোলন অনিবার্য হয়ে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানিদের জন্য। এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন বৈষম্যের অবসানের লক্ষ্যে। কিন্তু তাতেও আশানুরূপ ফলাফল না এসে উল্টো বৈষম্য ও নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। আর এভাবেই উদ্দীপকে ইঙ্গিতপূর্ণ বৈষম্যই জনগণকে গণঅভ্যুত্থানের দিকে ঠেলে দেয়।
ঘ) হ্যা, ইঙ্গিতপূর্ণ গণঅভ্যুত্থানটিই এদেশের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে। উদ্দীপকে ইঙ্গিতপূর্ণ প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে কার্যত বাংলাদেশের ইতিহাসকেই ফুটিয়ে তােলা হয়েছে। আইয়ুব খানের শাসনামলে বৈষম্যের যে চরম ও চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে, ছয় দফা তারই এক সুসংহত প্রতিবাদ। আর ছয় দফা দাবি উত্থাপনের পরই পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবকে ‘পাকিস্তানের শত্রু ও বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আখ্যা দিয়ে দমনপীড়ন শুরু করে। একপর্যায়ে আগরতলা মামলা দায়ের করে শেখ মুজিবকে আটক করা হয় এবং তাকে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে হত্যার পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু বাঙালি জাতির অগ্রদূতকে রক্ষার মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের জীবন বাঁচাতে পূর্ব পাকিস্তানিরা ভুল করেনি। ফলাফল হিসেবে ১৯৬৯ এ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আন্দোলনটি সংঘটিত হয়। বিপ্লবাত্মক এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা শহিদ হন। পরবর্তীতে আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করলে সামরিক সরকার আইয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। একইসাথে ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন দিতেও বাধ্য হয়। সরকার । আর উক্ত নির্বাচনের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতীয়তাবাদের রূপ স্পষ্ট হয় যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পরিশীলিত ও পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। স্পষ্টত গণঅভ্যুথানটি বাঙালির মুক্তি আন্দোলনের রূপরেখা পাল্টে দিয়ে স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল।
প্রশ্নঃ ০৪
মি. কবির একজন রাজনীতিবিদ। ২৫ বছর বয়সে তিনি স্বৈরশাসকের নিপীড়নে নিজ দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। উক্ত স্বৈরশাসক তার দেশে টানা ১০ বছর ধরে শাসন করে আসছিল। বর্তমানে তিনি পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নিজেকে একজন প্রার্থী হিসেবে। তৈরি করতে মনােনিবেশ করেছেন। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই। গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হচ্ছে ।
ক. ২১ দফা দাবির প্রথম দাবি কী?
খ. ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব সম্পর্কে কী কী জান? প্রেক্ষিতে আলােচ্য অংশের সাদৃশ্যপূর্ণ
গ. বাংলাদেশের শাসনামলের ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. উক্ত দেশের ন্যায় উদ্দীপকে ইঙ্গিতপূর্ণ দেশে কীভাবে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল? বিশ্লেষণ কর।
ক) একুশ দফার প্রথম দাবি ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে।
খ) ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ফলে ৬ দফা ও ১১ দফার প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিজয় ঘটে। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার ও স্বার্থান্বেষীমহলের জন্য এটি ছিল বিরাট পরাজয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পিছনে এ নির্বাচনের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ নির্বাচন বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে মুক্তিযুদ্ধের চরিত্র দানে বিশাল ভূমিকা রাখে। পরিণতিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
গ) উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বাংলাদেশের স্বৈরশাসন আমলটি হলাে ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সময়ে জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসন আমল। উদ্দীপকের মি. কুবির তার দেশের স্বৈরশাসকের অত্যাচারে নিজ দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। উক্ত স্বৈরশাসক তার দেশে টানা দশ বছর ধরে শাসন করে আসছিল। বাংলাদেশেও তদ্রুপ একজন স্বৈরশাসক একবার প্রায় দীর্ঘ ৯ বছর দেশে তার স্বৈরশাসন পরিচালনা করেন। বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের দুর্বল নেতৃত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, দলীয় কোন্দল প্রভৃতির কারণ দেখিয়ে ১৯৮২ সলের ২৪ মার্চ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা দখল করেন। রক্তপাতহীন এই শাসন পরিবর্তনের পর এরশাদ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন। এর এক বছর পর এরশাদ নিজেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দখল করে নেন। এ সময়ের মধ্যেই দেশে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয় এবং সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে নেওয়া হয়। শেখ হাসিনা, ড. কামাল হােসেনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার বা অন্তরীণ করা হয়। ছাত্র আন্দোলন দানা বেঁধে উঠলে সরকার পুলিশ বাহিনী লেলিয়ে দেয়। একপর্যায়ে সরকারের স্বৈরাচারিতার প্রতিবাদে গণআন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। উদ্দীপকে আলােচ্য অংশের সাদৃশ্যপূর্ণ বাংলাদেশের স্বৈরশাসনামলটি এভাবেই শুরু হয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল।
ঘ) উদ্দীপকে দেখা যায় যে, স্বৈরশাসকের অত্যাচারে দেশত্যাগ করা মি, কবির বর্তমানে দেশের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নিজেকে প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করতে মনােনিবেশ করেছেন। অর্থাৎ, একসময়ে। রাজনৈতিকভাবে অবরুদ্ধ বা নিপীড়িত হওয়া মি, কবিরের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে উক্ত দেশে স্বৈরশাসনের অবসানও গণতন্ত্রের পুনর্যাত্ৰা ঘটেছে। একইভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ইঞিাতপূর্ণ দেশ অর্থাৎ, বাংলাদেশেও দ্রুপে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রা সংঘটিত হয়েছিল। তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পদত্যাগের মাধ্যমে স্বৈরশাসনের অবসান। ঘটে এদেশে। এরপর নতুন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক ধারা সূচনা হয়। সংসদীয় সরকার পদ্ধতি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং দেশে তথ্যের অবাধ প্রবাহ, বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যম এর স্বাধীনতা প্রভৃতি স্বীকৃত হয়। এভাবেই ইঙ্গিতপূর্ণ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
প্রশ্নঃ ০৫
বাঙালির জাতির জীবনে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি একটি স্মরণীয় দিন। এটি বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরম বহিঃপ্রকাশ। এদিনে ছাত্র-ছাত্রীদের চরম ত্যাগ জাতিকে আরও বড় কিছু অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করে। এটিই স্বাধীনতার পথকে সুগম করে তােলে।
ক. ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
খ. বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় বিপ্লব’ বলতে কী নির্দেশ করা হয়?
গ. উল্লিখিত ঘটনাটির পটভূমি বর্ণনা কর।
ঘ. তুমি কি মনে কর যে উল্লিখিত ঘটনাটি বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের পথে সহায়ক ছিল? মতামত দাও।
ক) ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী।
খ) মুক্তিযুদ্ধের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ যখন ব্যস্ত, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি, খাদ্যসংকট ও বন্যায় খাদ্যোৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয়। দেশের অভ্যন্তরে মজুদদার, দুর্নীতিবাজ, ষড়যন্ত্রকারী গােষ্ঠী তৎপর হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু সরকার জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং শােষণহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন দল নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করেন। আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক এ নতুন প্রবর্তিত ব্যবস্থা ও উদ্যোগকে বঙ্গবন্ধু ‘দ্বিতীয় বিপ্লব' বলে অভিহিত করেন।
গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটি হলাে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। এ ঘটনার পটভূমি রচিত হয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই রাষ্ট্রভাষা কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন শুরু হয়। কিন্তু শাসকগােষ্ঠী বরাবরের মতাে এ প্রশ্নেও স্বৈরাচারমূলক আচরণ শুরু করে অন্যায়ভাবে তাদের ভাষা পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। তখন থেকেই ভাষার প্রশ্নে আন্দোলন গড়ে উঠতে শুরু করে। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে কার্জন হলে পাকিস্তানি গভরি মােহাম্মদ আলী জিয়াহ পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে ঘােষণা করলে উপস্থিত জনতা ‘না-না-না' বলে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানায়। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, শিক্ষক-ছাত ও বুদ্ধিজীবীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা বাংলা ভাষার পক্ষে অবস্থান নেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে ছাত্ররা গণপরিষদ ঘেরাও করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করতে চাইলে সরকার তা আঁচ করতে পারে। ফলে ১৪৪ ধারা জারি করে সরকার। কিন্তু ওই দিন অর্থাৎ ২১ ফেবুয়ারি ১৯৫২ আন্দোলনকারীরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার সিদ্ধান্ত মিলে আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে পুলিশ সর্বাত্মক কঠোর হামলার প্রস্তুতি নেয়। এভাবেই উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটির পটভূমি রচিত হয়েছিল।
ঘ) হ্যা, উল্লিখিত ঘটনাটি বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের পথে সহায়ক ছিল বলে আমি মনে করি। উদ্দীপকে উল্লিখিত স্মৃতিস্তম্ভের সাথে সম্পর্কিত আন্দোলনটি হলাে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এ আন্দোলনটি বাঙালিদের মধ্যে ঐক্য ও স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তুলেছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে উক্ত আন্দোলন তথা ভাষা আন্দোলন সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পাকিস্তান সরকার একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে চাইলে বাংলার ছাত্র-জনতা এর প্রতিবাদ করে এবং ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তারা ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায় করেন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এটি ছিল বাঙালি জাতির প্রথম প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রেরণা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতি শাসকগােষ্ঠীর অবহেলা, বঞ্চনা, শােষণের জাতাকলে পিষ্ট হচ্ছিল। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবমাননা বাঙালির মনকে প্রবল নাড়া দিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানের হাতে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি কিছুই নিরাপদ নয়। তাই পাকিস্তানের প্রতি আগে যে মােহ ছিল তা দ্রুত কেটে যেতে থাকে। নিজস্ব জাতিসত্তা সৃষ্টিতে ভাষা ও সংস্কৃতির সম্পর্ক এবং গুরুত্ব পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে অধিকতর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালি হিসেবে আত্মপরিচয়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি গড়ে তােলার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে থাকে। এরই ভিত্তিতে বাঙালি জাতি এক হতে থাকে এবং ভাষা আন্দোলন গড়ে তােলে। প্রথমে এ আন্দোলন শিক্ষিত ও ছাত্রসমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পূর্ব বাংলার সব ধৱনের নােক এতে অংশগ্রহণ করে। আর ভাষাকেন্দ্রিক এ ঐক্যই জাতীয়তাবাদের মূলভিত্তি রচনা করে। যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সুতরাং বাঙালির জাতীয়তাবাদের বিকাশে ভাষা আন্দোলন সকলকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।
প্রশ্নঃ ০৬
দৃশ্যকল্প-১: একজন প্রখ্যাত অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী একটি সামরিক শাসন বিরােধী আন্দোলনে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
দৃশ্যকল্প-২ : একজন স্বৈরশাসক এক পর্যায়ে সাধারণ নির্বাচনের আয়ােজন করেছিল। এ নির্বাচনে দেশটির একাংশের জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দলটি মন্ত্রিসভা গঠন করতে ব্যর্থ হয়।
ক. আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি কে ছিলেন?
খ. ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতিসমূহ কী কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১ এ ইঙ্গিতপূর্ণ ঘটনাটির প্রকৃতি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “যদি দৃশ্যকল্প-২ এর ঘটনাটি বাস্তবে না ঘটত, তবে বাংলাদেশের ইতিহাস হয়তাে ভিন্নরকম হতাে।” -তুমি কি এ মন্তব্যের সাথে একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
ক) আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি।
খ) ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতিসমূহ হলাে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র। এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। যে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ভিত্তি করে দেশটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রথম মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক বৈষম্য রােধে সমাজতন্ত্র ও সকল নাগরিকের ধর্মীয় নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা প্রদানের লক্ষ্যে সংবিধানে উল্লিখিত মূলনীতিসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়।
গ) উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-১ এ বর্ণিত প্রেক্ষিতে দেখা যায়, একজন প্রখ্যাত অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী একটি সামরিক শাসন বিরােধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এর মাধ্যমে মূলত ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে উক্ত গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃতি ছিল বিপ্লবাত্মক। পূর্ব পাকিস্তানের সকল গণতান্ত্রিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও সকল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত, অংশগ্রহণ ছিল এ অভ্যুত্থান। অধ্যাপক শামসুজ্জোহাকে বেয়নেট খুঁচিয়ে হত্যা করার পর প্রদেশব্যাপী ছাত্র, শিক্ষক, কৃষকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এক পর্যায়ে তকালীন সামরিক সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। আর এভাবেই দৃশ্যকল্প-১ এর. ইঙ্গিতপূর্ণ ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল ।
ঘ) হ্যা, প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যটির সাথে আমি একমত। উদ্দীপকের দৃশ্যকল্প-২ এ আমরা দেখতে পাই যে, স্বৈরশাসকের আয়ােজিত নির্বাচনে দেশটির জনপ্রিয় একটি দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করলেও উক্ত দলটি মন্ত্রিসভা গঠন করতে ব্যর্থ হয়। এর দ্বারা মূলত ১৯৭০ সালে স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের আয়ােজিত পাকিস্তানের। প্রথম সাধারণ নির্বাচনের প্রতিই ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। কেননা । ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভসহ মােট ২৯৮টি আসনের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করেনা। ক্ষমতা হস্তান্তর না করার মাধ্যমেই পাকিস্তানের দুরভিসন্ধি, নিপীড়ন ওসব ষড়যন্ত্রের বিষয়গুলাে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যা বাংলার মানুষ মেনে নেয়নি। আর সেই মেনে না। নেওয়ার জন্যই তারা যুদ্ধে নেমে নিজেদের অধিকার আদায় করে। যদি উক্ত সময়ে ক্ষমতা বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হতাে, তখন হয়তাে সাময়িকভাবে স্বাধিকার আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যেত । হয়তাে বিজয়ী সরকার পাকিস্তান সরকারের নামেই দেশ পরিচালনা করত। তখনও হয়তাে পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ পুরাপুরি অর্জিত হতাে না। দেশ ও বাঙালি জাতীয়তার বিজয় সেদিনের ন্যায় তৎক্ষণাৎ না হয়ে হয়তাে আরও বিলম্বিত হতাে। তবে বাংলাদেশ একদিন স্বাধীন হতােই। কারণ, পাকিস্তানিদের সাথে বাঙালির সহাবস্থান কখনই সম্ভব ছিল । নিপীড়কদের হাত থেকে নিপীড়িতদের মুক্তির গল্প হয়তাে হতাে পরবর্তী অন্য কোনাে এক সময়ে, অন্য কোনাে উপায়ে কিংবা অন্য কারও হাত ধরে। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে আমি সমর্থন করি ও একমত পােষণ করি।